মাহফুজ আলম, সিনিয়র রিপোর্টার, কাপ্তাইঃ
কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত কর্ণফুলী পেপার মিল সিবিএ কর্তৃক সংবাদ সম্মেলন করেছে। গত ২২ আগষ্ট বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সিবিএ কার্যালয়ে এক পৃষ্ঠা সম্বলিত মিলের সংকট নিরসনকল্পে স্মারকলিপি পাঠ করে জানান সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন বাচ্চু। তার বক্তব্যে বলা হয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামে স্মৃতি বিজড়িত ১১ দফার ১ দফা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন কেপিআই গ্রেড-১ ভূক্ত এশিয়ার বৃহত্তম কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিল লিঃ বর্তমানে গ্যাস সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় ভয়াবহ অর্থ সংকটে পড়েছে। ফলে শ্রমিক কর্মচারীদের জীবন জীবিকা অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মারক নং-৫৩.২৩.১৬.০০.০০.০২.১০.৫৭/১০ তাং-০৭/০২/২০১০ প্রজ্ঞাপন মূলে বর্তমান কর্ণফুলী পেপার মিল উৎপাদিত কাগজ সরকারী প্রতিষ্ঠান এনসিটিবি, নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারী মুদ্রালয়সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে কাগজ সরবরাহ করে আসছিল। হঠাৎ মিলের গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন, পানি, বিদ্যুতের সমস্যা তৈরী হওয়ায় এটিকে ষড়যন্ত্রমূলক কোন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মনে করা হচ্ছে কর্ণফুলী পেপার মিলের শ্রমিক কর্মচারী ও সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া পানি, বিদ্যুৎ গ্যাসের চরম অভাব দেখা দিয়েছে কর্ণফুলী পেপার মিল জুড়ে। ফলে কাগজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। মিলের সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে রহস্যজনক ভূমিকায় থাকায় এর কোন সুরাহা হচ্ছে না বলে শ্রমিকদের দাবী। এছাড়াও শ্রমিকদের পাওনাসহ নানামুখী সমস্যার কারণে লোকসানে জর্জরিত রাষ্ট্রায়াত্ত¡ প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম)। জানা গেল, গেল ৬ আগষ্ট থেকে ২২ আগষ্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ দিন যাবৎ পুরো কেপিএম এলাকার কোথাও পানি ও গ্যাস নেই। তবে দিনে কয়েক ঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও মিলের শ্রমিক কর্মচারী ও তাদের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তানদের লিখাপড়া করতে নরকের যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। মিলের ইতিকথাঃ ১৯৫১ সালে রাঙ্গামাটি জেলার ১ লাখ ২৬ হাজার একর জায়গা জুড়ে কেপিএম প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৫৩ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে প্রথম কাগজ বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। মিলটি প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন সময়ে সহযোগিতায় ছিল জার্মানী, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ইটালী ও সুইডেন। পার্বত্য রাঙ্গামাটির বিশাল এলাকায় বনজ নরম কাঠ-বাঁশ-কাঁচামালের সহজলভ্যতা থাকায় ১২০ টন কাগজ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পেপার মিলটি কয়েকযুগ ধরে লাভের মুখ দেখে। এ লাভের টাকায় সেখানে আরেকটি রেয়ন মিল প্রতিষ্ঠিত করা হয়। পরবর্তীতে অজানা ষড়যন্ত্রের কারণে মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে ২০০১ সালের পরবর্তী সময়ে মিলে নানা অব্যবস্থাপনা দুর্নীতি ও সীমাহীন অনিয়মের কারণে কর্ণফুলী পেপার মিলটি লোকসানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এছাড়াও অবসরে যাওয়া শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা ও কাঁচামাল ও বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ বাবদ কেপিএমটির কারণে ঠিকাদারদের পাওনা রয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা। আর গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে প্রায় ৮১ কোটি টাকা। বর্তমানে ঋণের বোঝায় নুয়ে পড়েছে কর্ণফুলী পেপার মিল। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৯ হাজার মেট্রিক টন কাগজের উৎপাদন কম হয়। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটির ভঙ্গুর দশা থেকে কাটিয়ে উঠার প্রয়োজনে ২০১৮ সালে ৩ অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র,আ,ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি টিম কেপিএম পরিদর্শন করেন। কিন্তু তদন্ত ও পরিদর্শনের এক বছর পার হলেও এর কোন কর্মগতি দৃশ্যমান হয়নি। এ বিষয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এমএ কাদের থেকে দপ্তরে গিয়ে বারবার জানতে চাইলে কর্মরত নিরাপত্তা প্রহরীগণ প্রবেশ করতে না দেওয়ায় সাক্ষাত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
